দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও ভাঙা সেতু মেরামত করা হয়নি

0
203
দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও ভাঙা সেতু মেরামত করা হয়নি
দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও ভাঙা সেতু মেরামত করা হয়নি

সেতুটি মাঝখানে ভেঙে পড়েছে। নদীর পাড়ে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক থেকে নেমে ঝুঁকি নিয়ে সেতু পার হচ্ছেন মানুষ। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মরিচচাপ নদীর ওপর নির্মিত বাঁকড়া সেতু ভেঙে পড়ার দেড় বছর পার হলেও মেরামত করা হয়নি। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মরিচচাপ নদীর ওপর নির্মিত সেতু দেড় বছর আগে ভেঙে পড়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন সেতু নির্মাণের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই ভাঙা সেতু দিয়ে আশপাশের ১০ হাজার মানুষ এখন যাতায়াত করছে। কিন্তু গাড়িতে যেতে হলে ৮-১০ কিলোমিটার যেতে হবে।

এদিকে নতুন করে সেতু নির্মাণের দায়িত্ব একে অপরের ওপর চাপাচ্ছে দুই বিভাগ। উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা বলছেন, সেতুর দুই পাশের সড়কগুলো স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন। এলজিইডি ধসে পড়া সেতু মেরামত বা পুনর্নির্মাণ করবে। আর এলজিইডি কর্মকর্তারা বলছেন, সেতুটি নির্মাণ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই ভেঙে পড়ে সেতুটি। এখন দায়িত্ব ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের।

বাঁকড়া সেতুটি জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নে অবস্থিত। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির মাঝখানের অংশ ভেঙ্গে হেলে পড়েছে। ব্রিজের দুপাশের প্যালিস্টারগুলো ভেঙে পড়ছে, রডগুলো মরিচা ধরেছে। মানুষ মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক থেকে নদীর পাড়ে নেমে ঝুঁকি নিয়ে পায়ে হেঁটে সেতু পার হচ্ছে। এ সময় দেখা যায়, একজন ব্যক্তি রিকশায় কিছু মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন। সেতুর ভাঙা অংশ ঢালু হওয়ায় চার-পাঁচজন লোক ভ্যান টেনে ওপরে নিয়ে যাচ্ছে।

এ সময় কুন্দুরিয়া গ্রামের রণজিৎ সরকার জানান, প্রতিদিন সাতক্ষীরা, দেবহাটা, কালিগঞ্জ, আশাশুনি, পাইকগাছাসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করে। এ সেতু দিয়ে তারা সদরে যাতায়াত করেন। এখন গাড়িতে যেতে হলে ৮-১০ কিমি যেতে হবে। ঝুঁকি কমাতে তারা এই ভাঙা সেতুর ওপর দিয়ে হেঁটে যান।

আশাশুনি উপজেলার কুন্দুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলাম জানান, তাদের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বাঁকড়ার ওপার থেকে আসে সেতু পার হয়ে। এখন তারা ঝুঁকি নিচ্ছে। বর্ষাকাল আসছে। তাহলে এই ভাঙ্গা সেতু দিয়ে পারাপার করা সম্ভব হবে না। নৌকায় ভ্রমণ। তারা জরুরি ভিত্তিতে এখানে একটি নতুন সেতু চান।

আশাশুনি উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট প্রস্থের এই বক্স আকৃতির সেতুটি নির্মাণ করে। এর ঠিকাদার ছিলেন পাইকগাছার মেসার্স জিএম হাসিব ট্রেডার্স। মিরিচাপ নদী খননের পর 4 জুলাই, 2022 সালে হঠাৎ সেতুটির মাঝখানের অংশটি ভেঙে পড়ে। স্থানীয় লোকজন জানান, আশাশুনি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মরিচচাপ নদী বুধহাটা ও শোবনালী ইউনিয়নকে বিভক্ত করেছে। ডিঙি নৌকায় নদী পার হয়ে আশাশুনি সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতো মানুষ। স্থানীয় জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে বুধহাটা ইউনিয়নের দক্ষিণে কুন্দুরিয়া এবং সোভনলী ইউনিয়নের উত্তরে বাংড়ায় এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ব্রিজটি স্থানীয়ভাবে বাঁকড়া সেতু নামে পরিচিত। কিন্তু পাঁচ বছর পর সেতুটি ভেঙে পড়ে।

আশাশুনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. সোহাগ খান জানান, ২০১৬-১৭ সালে তারা মরিচচাপ নদীর বাঁকড়া ব্রিজ নির্মাণ করেন। তখন দুই পাশে কাঁচা রাস্তা ছিল। 2019-2020 অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রাস্তাটি পাকা করেছে। ফলে সেতুটিও এলজিইডির অধীনে চলে যায়।

সাতক্ষীরা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, সেতুর দুই পাশে সড়কের এলজিইডির এ তথ্য সঠিক নয়। 2016-2017 অর্থবছরে এই সেতুটি নির্মিত হয়েছিল। একটি সেতু কমপক্ষে 50 বছর স্থায়ী হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে ভেঙে পড়লে দায় নিতে হবে ওই বিভাগকে। তারপরও জনদুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে সেতু নির্মাণের বিষয়টি বিবেচনা করতে দুই মাস আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন তিনি। কিন্তু কোনো নির্দেশ আসেনি।

বুধহাটা এলাকার ওবায়দুর রহমান মোটরসাইকেল চালিয়ে সংসার চালান। আগে দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার সেতু পার হতেন। এখন ব্রিজের পাশে যাত্রী নামানো হয়। কখনও কখনও আপনাকে অতিরিক্ত মাইল যেতে হবে। ফলে আয় কমেছে। এতদিন ধরে একটি সেতু ভেঙে যাওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। এখনো ঠিক হচ্ছে না। আর কত দিন এভাবে কষ্ট পাবে তারা