অ্যাম্বুলেন্সে করে ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় একই পরিবারের চার সদস্যের মৃত্যু।

0
237
ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় একই পরিবারের চার সদস্যের মৃত্যু
ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় একই পরিবারের চার সদস্যের মৃত্যু

ফারুক হোসেন ও মহসিনা সিদ্দিকী দম্পতি তাদের অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য টাঙ্গাইল থেকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে আসছিলেন। মহসিনার বড় বোন মাহফুজা বেগম তাদের সাথে ছিলেন। তাদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকার কাছে সাভারে পৌঁছালে এটি রাস্তার ডিভাইডারে ধাক্কা খায়। পরে দুটি বাস পেছন থেকে অ্যাম্বুলেন্সটিকে ধাক্কা দিলে অ্যাম্বুলেন্সে আগুন ধরে যায়। দগ্ধ হয়ে পরিবারের চার সদস্য মারা যান।

বুধবার ভোর ২টার দিকে সাভার উপজেলার ফুলবাড়িয়া পুলিশ টাউন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ভবানদত্ত গ্রামের স্কুল শিক্ষক ফারুক হোসেন সিদ্দিকী (৫০), তার স্ত্রী মহসিনা সিদ্দিকী (৩৮) এবং ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী (১৪) এবং মহসিনার বড় বোন সীমা আক্তার (৪০)।

নিহত ফারুক হোসেন সিদ্দিকী স্থানীয় ভবানদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার আরও একটি ছেলে আছে, যার নাম ফাহিম সিদ্দিকী, বয়স ১১ বছর।

মৃত মাহফুজার স্বামী মো. শাহিনুর আলম রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একজন কনস্টেবল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ফারুক এবং তার শ্যালিকা মহসিনা গত রাতে টাঙ্গাইল থেকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছিলেন। তার স্ত্রী মাহফুজাও তাদের সাথে ছিলেন। সাভারে পৌঁছানোর পর একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের প্রাণহানি ঘটে। রাত ১২টার দিকে তাদের মোবাইল ফোনে শেষ যোগাযোগ করা হয়েছিল। সকালে ল্যাবএইড হাসপাতালে গেলে তারা জানতে পারেন যে তাদের ভর্তি করা হয়নি। পরে তারা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তাদের মৃতদেহ দেখেন। সাভার হাইওয়ে থানা এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গতকাল রাত ২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের পুলিশ টাউন এলাকায় ঢাকাগামী একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রোড ডিভাইডারে ধাক্কা খায়। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সের পেছনে থাকা ঢাকাগামী ঝুমুর পরিবহনের একটি বাস এটিকে ধাক্কা দেয়, প্রথমে অ্যাম্বুলেন্স এবং পরে যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরে যায়। এরপর দ্রুতগতিতে আসা শ্যামলী পরিবহনের আরেকটি বাস দুর্ঘটনাগ্রস্ত দুটি গাড়িকে ধাক্কা দিলে তাতেও আগুন ধরে যায়। সেই সময় পাশ দিয়ে যাওয়া খড় বোঝাই একটি ট্রাকেও আগুন ধরে যায়। ঘটনার সময় যাত্রীরা দ্রুত দুটি যাত্রীবাহী বাস থেকে নেমে যান। কমপক্ষে ৭-৮ জন আহত হন। খবর পেয়ে সাভার ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় এক ঘন্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তারা অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর থেকে চারটি পোড়া লাশ উদ্ধার করে। পরে আহতদের রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ফুলবাড়িয়া পুলিশ টাউন এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ডিভাইডারের শুরুর অংশ সামান্য ভেঙে গেছে। রাস্তায় কাঁচের টুকরো পড়ে আছে। আগুনে পুড়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্স এবং ঝুমুর পরিবহনের বাসটি রাস্তার পাশে কিছুটা দূরে রাখা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সের সামনের বাম দিকটি বেশ কিছুটা ভেতরে চলে গিয়েছিল। ঝুমুর পরিবহনের সামনের দিকটিও দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছিল। আগুনে দুটি গাড়িই সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ঝুমুর পরিবহন বাসের কার্গো বাক্সে কমপক্ষে ২০-২৫টি ছাগল মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। রাস্তার পাশে একটু দূরে খড়ের গাদা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। সাভার হাইওয়ে থানার সামনে রাস্তার পাশে দুর্ঘটনায় জড়িত শ্যামলী পরিবহনের বাস এবং একটি ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। আগুনে তারাও পুড়ে গেছে।

ফায়ার সার্ভিস (ঢাকা অঞ্চল-৪) উপ-সহকারী পরিচালক মো. আলাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রাত ২:০৪ টার দিকে টাউন এলাকায় একটি গাড়িতে আগুন লাগার খবর পায় পুলিশ। পরে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। দ্রুত তিনটি গাড়িতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর থেকে দুই নারী, একজন পুরুষ এবং একটি শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও, ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় সাতজনকে উদ্ধার করা হয়েছে।