ক্রিকেটার হওয়া ছাড়াও সাকিব আল হাসানের আরও কিছু পরিচয় আছে। রাজনীতিতে জড়িত থাকা ছাড়াও তিনি একজন ব্যবসায়ী। গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে সাকিব দেশে আসতে পারেননি। তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলাও দায়ের করা হয়েছে। সম্প্রতি দেশের একটি ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাকিব এসব বিষয়ে কথা বলেছেন।
ক্রিকেটের বাইরে বাংলাদেশে সাকিব কী কী ব্যবসায় জড়িত তা বলার সময় তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ক্রিকেট ছাড়া অন্য বিষয়গুলোতে আমি খুব বেশি মনোযোগ দিতে পারিনি, স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসা এবং লাভের দিকে আমার মনোযোগ ছিল না। আমি দুটি ব্যবসার সাথে জড়িত; একটি আমার কাঁকড়া খামার, অন্যটি স্টক মার্কেট ব্যবসা।’
সাকিবের দাবি, করোনা মহামারির আগে কাঁকড়ার ব্যবসায় ভালোই করছিলেন। তখন ঋণ পরিশোধে কোনো বকেয়া জমা হয়নি। কিন্তু কোভিড মহামারির কারণে খামারটির কার্যক্রম থমকে যায় এবং পণ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রচুর লোকসান হয়। সাকিবের ভাষায়, ‘এখন হিসাবটি এমন, আমি খামারটির ৩৫ শতাংশের মালিক, বাকি ৬৫ শতাংশ অন্যদের। কিন্তু যে কারণেই হোক, লোকে শুধু সাকিব আল হাসানের নামই জানে। এই ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট বাকিদের নাম উল্লেখ করা হয়নি।’
সাকিব এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, “দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির উচিত ছিল অংশীদারদের সাথে কথা বলে আসল সমস্যাটি বোঝা। কিন্তু যাই হোক, সমস্ত ভুলের দায় আমার উপর চাপানো হচ্ছে। কারণ, আমার নাম সংগঠনের সাথে যুক্ত।”
প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করার বিষয়ে সাকিব বলেন, “মানুষের শত শত কোটি টাকা বকেয়া আছে। আর এখানে মাত্র ৪.৫ কোটি টাকা। আমার ৩৫ শতাংশ অংশ বিবেচনা করলে, আমাকে মাত্র ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা দিতে হবে। কিন্তু আমার সম্পত্তি যেভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে তা স্বাভাবিক বলে আমি মনে করি না।”
ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা পরিশোধের নোটিশ পেয়েও টাকা না দেওয়ায় এবং চেক প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় গত মার্চে সাকিবের সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।
আমার মনে হয় না, আমি কোনো অপরাধ করেছি। তখন পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল। এখন সবকিছু যখন শান্ত হয়ে এসেছে, লোকে বুঝতে পারছে, শুধু একটি ছবির জন্য কারও এমন শাস্তি হওয়া অনুচিত।
সাকিব আল হাসান
সাকিবের কাছে এরপর তাঁর শেয়ারবাজারের ব্যবসা নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। গত বছর নভেম্বরে সংবাদমাধ্যম জানায়, শেয়ার ব্যবসায়ে কারসাজির জন্য ৫০ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে সাকিবের। এই ব্যবসা নিয়ে সাকিব বলেছেন, ‘যদি কেউ দেখাতে পারেন আমি নিজে একটি কারসাজি করেছি, তাহলে আমার যা কিছু আছে, সব দিয়ে দেব। বাংলাদেশের স্টক মার্কেটে কীভাবে কারসাজি করতে হয়, আমি জানি না এবং আমার ফোনে কোনো ট্রেডিং অ্যাপও নেই।’
সাকিব দাবি করেন, ‘আমি বিষয়টি থেকে পালাতে চাই না। আমি সামনে এসে সবকিছু সমাধান করতে চাই। এই সুযোগ আমার প্রাপ্য। তারা যদি আমাকে এই সুযোগ দিত তাহলে ভালো হতো… আমার মনে হয় না আমি কোনও অপরাধ করেছি। তখন পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। এখন সবকিছু শান্ত হয়ে গেছে, মানুষ বুঝতে পারছে যে কেবল একটি ছবির জন্য কাউকে এভাবে শাস্তি দেওয়া ঠিক নয়।’
তাহলে তিনি কি তদন্তে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত? সাকিব উত্তর দেন, ‘অবশ্যই। তাদের যা কিছু তথ্যের প্রয়োজন, আমি তা দিতে প্রস্তুত—কাঁকড়া খামার এবং শেয়ার ব্যবসা সম্পর্কে। যদি তারা মনে করে যে আমাকে (দেশে) পরিষ্কার তদন্তের জন্য আসতে হবে, তাহলে আমি খুশি হব। আমি কিছু লুকাচ্ছি না, কিছু চুরি করছি না এবং পালিয়ে যাচ্ছি না।’
মন্তব্য করুন